সুফী ফতেহ আলী ওয়াইসী – জন্ম ও কর্ম জীবন
সুফি ফতেহ আলী ওয়াসি (১৮২০-১৮৮৬) ছিলেন একজন সুফি সাধক, ইসলাম প্রচারক ও ফারসি ভাষার কবি। তার ফার্সি ভাষায় লেখা দিওয়ান-ই-ওয়াসি মহাকাব্যটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয়। সাহিত্যিক গুরুত্ব বিচারে কাব্যটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তাঁর নামে দারুননাজাত সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসায় একটি আবাসিক হল রয়েছে।
ফতেহ আলী চট্টগ্রাম জেলার তৎকালীন সাতকানিয়া উপজেলার অন্তর্গত বর্তমান লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের মল্লিক সোবহান হাজীপাড়ায় ১৮২০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম ওয়ারেস আলী, তিনিও একজন সুফি সাধক ছিলেন, তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বালাকোটের যুদ্ধে শহীদ হন। ওয়াসির মাতার নাম ছিলো সাঈদা খাতুন, হজ্বে যাওয়ার সময়, ট্রলার ডুবিতে মৃত্যুবরন করেন।
ওয়াসির পূর্বপুরুষগণের আদি নিবাস সৌদি আরবের মক্কাতে, এই পরিবার আলী ইবনে আবু তালিব ও আবদুল কাদির জিলানীর বংশধর থেকে এসেছে। পরবর্তী সময়ে এরা চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার মল্লিক সোবহান গ্রামে বসতি স্থাপন করেন।
ফতেহ আলী ভারতের হুগলি মোহসিনীয়া মাদ্রাসা ও কলকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। তিনি সুফিবাদের বিভিন্ন ধারার মিশ্র আধ্যাত্মিক সাধক ছিলেন, এসব ধারার মধ্যে কাদেরিয়া, চিশতিয়া ও নকশবন্দিয়া তরিকা উল্লেখযোগ্য। এসব সাধনার পাশাপাশি তিনি ফারসি ভাষায় কাব্যচর্চাও করেছিলেন। তিনি ওয়াসি ছদ্মনামে লেখালেখি করতেন, এজন্য তার নামের শেষে ওয়াসি নাম জনপ্রিয় হয়ে উঠে। তার ফার্সি ভাষায় লেখা দিওয়ান-ই-ওয়াসি মহাকাব্যটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা এনে দেয়, এই মহাকাব্যটি লেখকের অন্যতম গুরুত্ববহ বই। সাহিত্যিক গুরুত্ব বিচারে কাব্যটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তিনি ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলার পুনাশিতে নিজস্ব বাড়িতে থাকতেন। তবে তিনি কলকাতার শিয়ালদহের একটি স্থানে মঠ কোঠাতে বাস করতেন।
তিনি কর্মজীবনের প্রথম দিকে কলকাতা হাইকোর্টের ফার্ম বিভাগের কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন। এই সময় তিনি ইসলামি শিক্ষা প্রদান করা শুরু করেন। এরপরে তিনি কলকাতা মেটিয়া বুরুজের নওয়াব শাহ ওয়াজেদ আলীর ব্যক্তিগত সেক্রেটারি হিসাবে কাজ শুরু করেন। এরপরে পলিটিক্যাল পেনশন অফিসের সুপারিন্টেন্ডেন্টের পদে যোগদান করেন। এরপরে তিনি চাকরি জীবন থেকে অবসর নিয়ে পুরোপুরি ইসলামি আধ্যাত্মিক শিক্ষা প্রদানের কাজ শুরু করেন।
ওয়াসি ছোটবেলায় তার বড় ভাইয়ের সাথে আধ্যাত্মিক সিদ্ধির জন্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের অরণ্যে গিয়েছিলেন। তিনি নূর মুহাম্মদ নিজামপুরীর নিকট বাইয়াত গ্রহণ করেন, তার নিকট থেকেই কাদেরিয়া, নকশবন্দীয়া, চিশতিয়া ও মোজাদ্দেদিয়া তরিকার খেলাফত (উত্তরসূরিতা) লাভ করেন।
ওয়াসি পরবর্তীকালে স্থায়ীভাবে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ চলে যান এবং ১৮৮৬ সালে কলকাতা যাওয়ার সময় হাওড়া রেলওয়ে ষ্টেশনে মৃত্যুবরণ করেন।[১] তিনি ৬৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরন করেন।